আড় মাছের কালিয়া বা মাছের কালিয়া একটি অনন্য বাঙালি মাছের রেসিপি যা বাংলা এবং পূর্ব ভারতের উপমহাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়। মাছলি কালিয়া ছাড়া যে কোনো বাঙালি বিয়ের অনুষ্ঠানই অসম্পূর্ণ। এটি তার অনুকরণীয় স্বাদ, টেক্সচার এবং গন্ধের জন্য পরিচিত। এই প্রস্তুতিতে, ভাজা মাছের টুকরোগুলি একটি মশলাদার পেঁয়াজ-টমেটো গ্রেভিতে সিদ্ধ করা হয়। এই সুস্বাদু খাবারটি বেশিরভাগই বাষ্পী বাসমতি চালের সাথে খাওয়া হয়।
আর মাছের কালিয়া রেসিপি সম্পর্কে
বং হিসাবে, আমি বিয়ের অনুষ্ঠান, অন্নপ্রাশন, গৃহ-উষ্ণতা এমনকি ছোট জমায়েতের মতো অনেক বিশেষ অনুষ্ঠানে মাছের কালিয়া খেয়ে বড় হয়েছি। মাছ এবং বাঙালির মধ্যে একটি চিরন্তন সংযোগ রয়েছে এবং আমি এর সাথে সম্পূর্ণ একমত। মাছ ছাড়া যে কোনো অনুষ্ঠানই অসম্পূর্ণ, বিশেষ করে মাছের কালিয়া। বাঙালিদের কাছে মাছ একটি খাদ্য উপাদানের চেয়ে অনেক বেশি। আমাদের পুরানো পূর্বপুরুষদের মতে, মাছগুলি শুভ এবং এটি যে কোনও উদযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বাংলা ও বাংলাদেশ উভয়ই অনেক নদী দ্বারা বেষ্টিত। তারা যুগ যুগ ধরে মিঠা পানির মাছের চমৎকার উৎস। মাছের প্রাপ্যতাই এসব অঞ্চলে মাছের তরকারির প্রচলনের প্রধান কারণ। বাঙালি খাবারে মাছের তরকারির বিশাল বৈচিত্র্যের পেছনে এই রহস্য।
মাছের কালিয়া বা মাছের কালিয়া যেকোনো উদযাপনের জন্য সবচেয়ে প্রিয় মাছের তরকারির একটি। বিয়ের অনুষ্ঠান বা রিসেপশন পার্টিতে, মাছের কালিয়া বেশিরভাগই বড় রুই মাচ বা কাতলা মাছ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়, যার ওজন ৩ কেজির বেশি। তবে মাছের কালিয়া রেসিপি যে কোনো বড় মাছ যেমন আড় মাছ, চিতল মাছ ইত্যাদি দিয়েও তৈরি করা যায়। বাঙালি পরিবারে, আর মাছের কালিয়া প্রায়শই বিশেষ দিনে তৈরি করা হয় যেমন জন্মদিনের পার্টি, ছোট ছোট গেট টুগেদার ইত্যাদি।
আর মাছের কালিয়া বা মাছের কালিয়া একটি সহজ রেসিপি এবং রান্নার অসুবিধা মাঝারি থেকে কম। বায়ে বারি স্টাইলে মাছের কালিয়া রান্না করতে আপনাকে কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে। তদুপরি, রেসিপিটির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি নিয়মিত বাঙালি রান্নাঘরের প্যান্ট্রিতে পাওয়া যাবে।
আমি মাছের কালিয়া রেসিপির একজন বিশাল ভক্ত এবং এটি আমাকে সবসময় আমার শৈশবের মধুর স্মৃতিতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। আমার এখনও মনে আছে বাবা যখনই বাজার থেকে মিষ্টি জলের আড়মাছ নিয়ে আসতেন মাকে এই বিশেষ আড় মাছের কালিয়া বানাতে বলতাম।
এই মাছের কালিয়া রেসিপি আমি আমার মায়ের কাছ থেকে শিখেছি। রান্নার প্রতি তার দারুণ আগ্রহ এবং বিভিন্ন ধরনের মাছের তরকারি তার বিশেষত্ব। আমি তার কাছ থেকে অনেক মাছের তরকারি শিখেছি এবং আর মাছের কালিয়া তার মধ্যে অন্যতম। এটি একটি ফুল-প্রুফ রেসিপি এবং অবশ্যই আপনাকে কালিয়া রেসিপির খাঁটি স্বাদে নিয়ে যাবে।
রেসিপির ‘নির্দেশনা’ বিভাগে ধাপে ধাপে ছবি ও নির্দেশাবলী সহ r মাছের কালিয়া। আমি একটি নিখুঁত আর মাছের রেসিপি প্রস্তুত করার জন্য সমস্ত টিপস এবং কৌশল নীচে শেয়ার করেছি। তবে সরাসরি রেসিপিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে, আমাকে আর মাচ (লং হুইস্কার্ড ক্যাটফিশ) এবং রেসিপি সম্পর্কে কিছু আকর্ষণীয় তথ্য শেয়ার করতে দিন।
আর মাচের স্বাস্থ্য উপকারিতা
- মাছের মধ্যে থাকা ওমেগা ৩ আমাদের হৃদয়কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- আড় মাচে প্রোটিন বেশি এবং চর্বি কম যা বাচ্চা থেকে বড়দের জন্য উপকারী।
- এগুলো ভিটামিন ডি এর খুব ভালো উৎস যা আমাদের হাড়ের জন্য অপরিহার্য।
আপনি যদি এই রেসিপিটি পছন্দ করেন তবে আপনি অন্যান্য রেসিপি চেষ্টা করতে পারেন
- ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে লাউ ঘণ্ট , মাছের মাথা দিয়ে লাউ ঘণ্ট
- দম চিতল, চিতল মাছের এই পদ খেলে আঙ্গুল চাটতে থাকবেন
- লোটে মাছের ঝুরি
- বেকড তেলাপিয়া, সহজ লেবু রসুন দিয়ে বেকড তেলাপিয়া রেসিপি
- চিংরি মাছের ঝাল বাংলা স্টাইলের চিংড়ি মসলা
- স্মোকড ইলিশ, বাংলায় আমরা ভাপা ইলিশ বলে জানি রইল রেসিপি
চলুন সময় নষ্ট না কোরে ডুব দেওয়া যাক আর মাছের কালিয়া রেসিপিতে।
প্রস্তুতির সময়ঃ ১০ মিনিট । রান্নার সময়ঃ ৩৫ মিনিট । মোট সময়ঃ ৪৫ মিনিট । ৪ জনের জন্য । কোর্সঃ আর মাছের কালিয়া । রন্ধনপ্রণালীঃ ভারতীয় রেসিপি
আর মাছের কালিয়ার উপকরণ
মশলা পেস্টের জন্য
- ১ চা চামচ হলুদ গুড়ো
- ১ চা চামচ লঙ্কা গুড়ো
- ১ চা চামচ জিরা গুড়ো
- ১ চা চামচ ধনে গুড়ো
- ২-৩ টেবিল চামচ জল
মাছ মেরিনেট করতে
- ৪ টি বড় আড় মাচের টুকরো
- ১ চা চামচ নুন
- ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
আড় মাছের কালিয়ার অন্যান্য উপকরণ
- ১ তেজপাতা
- ১ টি দারুচিনি কাঠি
- ৪ টি লবঙ্গ
- ৩ টি এলাচ
- ১ টি শুকনো লঙ্কা
- ১/৪ চা চামচ জিরা
- ১ টি ছোট পেঁয়াজ সূক্ষ্মভাবে কাটা
- ১ টি বড় পেঁয়াজ পেস্টের জন্য
- ২ টি বড় লবঙ্গ ও রসুনের পেস্টের জন্য
- ১ ইঞ্চি আদা পেস্টের জন্য
- ১ টি কাঁচা লঙ্কা পেস্টের জন্য
- ২ টমেটো, পেস্টের জন্য
- ৩-৪ টি কাঁচা লঙ্কা
- আধা চা চামচ গরম মসলা
- ১-২ চা চামচ চিনি সেই অনুযায়ী সামঞ্জস্য করুন
- নুন স্বাদ মতো
- ১/৪ কাপ সরিষার তেল
- ডের কাপ জল গ্রেভির জন্য
রআর মাছের কালিয়ার ন্ধন প্রণালী
- আর মাচের টুকরোগুলি পরিষ্কার করুন এবং চলমান জলে ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন। তারপর মাছের টুকরোগুলো প্লেটে তুলে নিন।
- ১ চা চামচ নুন এবং ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো দিয়ে মাছের টুকরোগুলো ম্যারিনেট করুন।
- নিশ্চিত করুন যে সমস্ত টুকরা সমানভাবে লেপা হএয়াছে, এগুলি ১০ মিনিটের জন্য একপাশে রাখুন।
- পেঁয়াজের টুকরো, আদা, রসুন, ১ টি কাঁচা লঙ্কা গ্রাইন্ডারের জারে রেখে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। একপাশে রাখুন।
- টমেটোর টুকরোগুলো গ্রাইন্ডারের জারে রেখে ঢাকনা বন্ধ করে দিন। একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করার জন্য এটি পিষে একপাশে রাখুন।
- একটি বাটি নিয়ে তাতে ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়া, ১ চা চামচ লঙ্কার গুঁড়া, ১ চা চামচ ধনে গুঁড়া,
- ১ চা চামচ জিরা গুঁড়া এবং ২-৩ চা চামচ জল দিন।
- মশলার একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করতে এটি ভালভাবে মিশিয়ে একপাশে রাখুন।
- প্যানটি আগুনে রাখুন এবং এটি সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে নিন।
- প্যানে ১/৪ কাপ সরিষার তেল ঢালুন এবং তেল গরম হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন।
- আঁচ কম রাখুন এবং প্যানে ম্যারিনেট করা মাছের টুকরো যোগ করুন।
- মাছের টুকরোগুলো মাঝারি আঁচে ৩-৪ মিনিট ভেজে নিন।
- তারপর খুব সাবধানে টুকরোগুলো উল্টিয়ে অন্য দিকেও একইভাবে ভাজুন।
- গরম তেলের ছিটা এড়াতে মাছের টুকরো ভাজার সময় আমি স্প্ল্যাটার গার্ড ব্যবহার করেছি।
- বাড়তি তেল ঝরিয়ে র মাচের টুকরোগুলো আলাদা করে প্লেটে রাখুন।
- পরামর্শঃ মাছ বেশি সেদ্ধ করবেন না, অন্যথায় মাছ ছিবড়ে উঠবে।
- একই প্যানে, প্রয়োজনে আরও একটু সরিষার তেল দিন এবং তেল গরম হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
- তেল গরম হলে ২ ইঞ্চি দারুচিনি, ৩ টি এলাচ, ৪ টি লবঙ্গ, ১ টি তেজপাতা, ১ টি শুকনো লঙ্কা, ১/৪ চা চামচ জিরা দিয়ে কষতে দিন।
- সূক্ষ্মভাবে কাটা পেঁয়াজ যোগ করুন এবং মাঝারি আঁচে ৩-৪ মিনিটের জন্য ভাজুন।
- প্যানে পেঁয়াজের পেস্ট যোগ করুন এবং ভালভাবে নাড়ুন।
- শুরুতে আঁচ কম রাখুন কারণ পেস্টটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- তারপর জ্বাল মাঝারি করুন এবং পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ৭-৮ মিনিট রান্না করুন। মাঝে নাড়তে থাকুন।
- মসলায় টমেটো পেস্ট যোগ করুন এবং ভালভাবে মেশান। ৪-৫ মিনিট মাঝারি আঁচে মশলা রান্না করুন। মাঝে নাড়তে থাকুন।
- প্যানে মসলা পেস্ট যোগ করুন এবং ভালভাবে মেশান।
- অল্প আঁচে কিছুক্ষণ রান্না করুন যাতে মসলা ভালোভাবে সেদ্ধ হয় এবং কাঁচা গন্ধ চলে যায়।
- নুন যোগ করুন এবং একটি ভাল মিশ্রণ দিন। যতক্ষণ না মসলা তেল ছাড়তে শুরু করে ততক্ষণ রান্না করুন।
- প্যানে ডের কাপ জল যোগ করুন এবং ভালভাবে নাড়ুন।
- এতে ৩-৪ টি কাঁচা লঙ্কা দিন। প্যানটি ঢেকে রাখুন এবং গ্রেভি ফুটতে শুরু না হওয়া পর্যন্ত আঁচে রাখুন। প্যানের ঢাকনা সরিয়ে আঁচ কমিয়ে দিন।
- ভাজা মাছের টুকরোগুলো সাবধানে গ্রেভিতে দিন।
- প্যানটি ঢেকে ৫ মিনিটের জন্য কম আঁচে রান্না করুন।
- ঢাকনা সরান এবং খুব সাবধানে টুকরা উল্টান আবার, প্যানটি ঢেকে দিন এবং অল্প আঁচে কয়েক মিনিট রান্না করুন।
- রান্নার শেষ পর্যায়ে প্যানে ১-২ চামচ চিনি, ১/২ চামচ বাংলা গরম মসলা পাউডার যোগ করুন এবং ভালভাবে নাড়ুন।
- আঁচ বন্ধ করে প্যানটি নামিয়ে রাখুন, আর মাছের কালিয়া প্রস্তুত।।
এখন আপনার সুস্বাদু আর মাছের কালিয়া প্রস্তুত।
টিপসঃ
- মাছের টুকরোগুলো সবসময় নুন ও হলুদ গুঁড়ো দিয়ে ১৪-১৫ মিনিট ম্যারিনেট করে রাখুন।
- এই মাছের রেসিপি রান্না করার জন্য সর্বদা সরিষার তেল ব্যবহার করুন। এটি মাছের তরকারিতে আশ্চর্যজনক স্বাদ এবং স্বাদ দেবে।
- গ্রেভিতে যোগ করার আগে মাছটি পরিমিতভাবে ভাজুন। বেশি ভাজা মাছ চিবিয়ে তোলে।
- তরকারিতে যোগ করার আগে মশলা গুঁড়ো দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন যাতে ধাপটি সহজ হয়।
- আপনার নিজের পছন্দ অনুযায়ী কাঁচা লঙ্কার সংখ্যা এবং লঙ্কা গুঁড়ার পরিমাণ সামঞ্জস্য করুন।
- কালিয়া তৈরি স্বাদের জন্য গ্রেভিতে কিছুটা চিনি যোগ করতে ভুলবেন না।
- আর মাছের কালিয়ার টেক্সচার ঘন তবে আপনি আপনার নিজের পছন্দ অনুযায়ী গ্রেভির জন্য জলের পরিমাণ সামঞ্জস্য করতে পারেন।
আমি ধাপে ধাপে রেসিপিটি দিয়েছি যাতে আপনি সহজেই রেসিপিটি পড়ে রান্নাঘরে রান্না করতে পারেন।
আমাদের রেসিপি টা ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। এরকম আরো রেসিপি পড়তে আহারে বাহারের সাথে যুক্ত থাকুন।